উৎপত্তি-যোগিনীতন্ত্র ঘটনাপঞ্জি থেকে জানা যায় ৩৫০ থেকে ১১৪০ পর্যন্ত কামরূপ রাজত্ব দক্ষিণ ব্রহ্মপুত্র নদ ও শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত আজকের ঢাকা অঞ্চল ছিল। ১১ দশক অবধি পাল বংশ রাজত্ব করবার পর ১৩০০ সালের শেষের দিকে মোঘল আমল আরম্ভ হয়। এর পর থেকে ১৬০০ সাল অবধি মোঘল বিরোধী বারো ভূঁইয়াদের রাজত্ব চলে। ১৬০০ সালে ইসলাম খান চিশতী বাংলার দায়িত্ব নিলে বারো ভূইঁয়াদের পতন ঘটে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ঢাকা বাংলার প্রাদেশিক রাজধানী করা হয়। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে এই শহর জাহাঙ্গীর নগর নামে পরিচিত ছিল। তখন বিশ্বের সেরা মসলিন তৈরী হতো ঢাকাতে। মসলিন বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল ঢাকা। ক্রমে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ আমলে কলকাতার পরে ঢাকা দ্বিতীয় বৃহত্তম নাগরী হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পরে ঢাকা পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী হয়। এরপর ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঘোষিত হয়।

ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায়,মোঘল আমলে ভৌগোলিক অবস্থান ও সম্পদশালী প্রদেশ হিসাবে ঢাকার অভূতপূর্ব উত্থান হয়েছিল। সেসময়ে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্য বিশেষত মসলিন রপ্তানির জন্য অর্থনৈতিকগত ভাবে পরিপুষ্ট ও প্রশাসনিকগত একটি সমৃদ্ধশালী নাগরী হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির

নাম করণ ঢাকা শহরের নাম করণের নানা কাহিনী বিদ্যমান । ঢাকেশ্বরী দেবীর মন্দির থেকে ঢাকা নামের উৎপত্তি। মনে করা হয় যে সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে একটি হিন্দু দেবী দুর্গার বিগ্রহ খুঁজে পেলে সেখানে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।দেবী দূর্গা ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো বলে মন্দিরের নাম হয় ঢাকেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরের নাম থেকেই ঢাকা শহর নামের উৎপত্তি। কারো মতে এই অঞ্চলে ঢাক গাছ বা বুটি ফুডোসা প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেত বলে এই জায়গার নাম ঢাকা দেওয়া হয়েছে । রাজধানীর উদ্বোধনের দিন ঢাক বাজানো হয়েছিল বলে কেউ কেউ বলেন তা থেকেই ঢাকা নগরীর নাম হয়েছে । তাছাড়াও অতীতে ঢাক ভাষা নামে একটি প্রকৃত ভাষা ছিল । রাজতরঙ্গিনী তে আছে ঢাক্কা শব্দ যার অর্থ পর্যবেক্ষণ এছাড়াও এলাহাবাদ শিলালিপিতে সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ডবাক হলো ঢাকা কেন্দ্র।
দর্শনীয় স্থান: ঢাকার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, লালবাগের কেল্লা, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকেশ্বরী মন্দির ইত্যাদি ।
সিধ্বেশ্বরী মন্দির
পুরনো ঢাকার শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ৫০০ বছরের পুরানো শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। প্রত্যেক বছর দূর্গা পূজা কালিপূজায় এখানে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়। মন্দিরের নামেই এলাকার নাম হয়েছে সিদ্ধেশ্বরী লেন। কথিত আছে, বিক্রমপুরের তৎকালীন জমিদার চাঁদ রায় আনুমানিক ১৫৮০ সালে মন্দিরটি তৈরী করেন। এখানে একসময় নরবলি হতো। বাংলার আধ্যাত্মীক জগতের সাধিকা আনন্দময়ী মা ১৯২৬ সালে এখানে তার সাধনকালে ভক্তদের মধ্যে ধার্মিক উর্জা প্রদান করেন। ফলস্বরূপ দিকে দিকে মন্দিরের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে দীপান্বিতা অমাবস্যায় শ্যামা পুজো,শারদীয়া দূর্গা পুজো,জগদ্ধাত্রী পুজো,জন্মাষ্টমী ও শোভা যাত্রা,মহাশিবরাত্রি,বাসন্তী পুজো,সরস্বতী পুজো সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি দরিদ্রদের বস্ত্র বিতরণ,ধর্ম সভা তারকব্রম্ভ নাম যজ্ঞানুষ্ঠান,নাম সংকীর্তন,গীতা শিক্ষ্যা প্রদান বারো মাস ধরে চলে।
ঢাকাই মসলিন

ঢাকাই মসলিন হোল ফুটি কার্পাস সুতোয় তৈরী হস্তচালিত তাঁতে বোনা অতি সূক্ষ্য কাপড় যা ৫০ মিটার দীর্ঘ একটি শাড়িকে অনায়াসে দেশলাই বক্সে ভোরে রাখা যায়। ঢাকায় মসলিনের আদি ঘর এই ঢাকাকেই বোঝায়। বাংলাদেশের সোনার গাও এবং ঢাকা মসলিনের আঁতুরঘর। প্রাচীনকালে ঢাকায় মসলিন ছিল সর্বাধিক মূল্যবান কাপড়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
ঢাকাই জামদানি শাড়ি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সরকারি আর্থিক সাহায্যে ঢাকার ডেমরায়, কিশোরগঞ্জ, নোয়াপাড়া জামদানি শিল্পের উন্নতি শুরু হয়। বর্তমানে জামদানির ব্যাপক চাহিদা এবং উচ্চ মূল্যের কারণে এই শিল্প ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। ইউনেস্কো এই শিল্প কে ‘ইন্ট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি’র স্বীকৃতি দান করেছে। এছাড়াও জি আই জামদানিকে ঐতিহ্যবাহী পণ্যে হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।


বাংলাদেশের দূষিত যদি গুলির মধ্যে বুড়িগঙ্গা অন্যতম। নদীর ৪০%দূষণের কারণ ২৫১ টি পাইপলাইনের মধ্যে সরাসরি অপরিশোধিত বর্জ্য এসে মিশছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আহমদ কারুজ্জমান মজুমদার বলেন, “বুড়িগঙ্গা যদি প্রাথমিক উৎস অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন, শিল্প বর্জ্য, বর্জ্য ফেলার পয়েন্ট এবং নদীপথে চলা যানবাহন থেকে নির্গত বর্জ্য। বিশ্ব সাস্থ সংস্থার মতে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত যদি গুলির মধ্যে একটি হলো বুড়িগঙ্গা। প্রতিদিন শহরের ৬০ হাজার ঘনমিটারের বেশি বিষাক্ত এ নদীতে ফেলা হয়। বুড়িগঙ্গাকে প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নদীর তীরে অপরিশোধিত পয় নিষ্কাশন ও বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।