“স্রোতের বশে তরুণ মন: স্মার্টফোনে বন্দি, বইয়ের পৃষ্ঠায় অনীহা…”
“একটি সময় ছিল, যখন বিকেলের আকাশ রঙিন হত বইয়ের গল্পে, কিশোর মন উড়ে যেত রূপকথার জগতে। কিন্তু আজ? তরুণ প্রজন্ম স্মার্টফোনের রঙিন স্ক্রিনে ডুবে। সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও রিলস, আর অনলাইন গেম যেন ধীরে ধীরে গ্রাস করছে পাঠ্যবইয়ের আবেদন। পাঠ্যাভ্যাস হ্রাসের এই প্রবণতা কি কেবল তরুণদের দোষ? নাকি এর পেছনে আছে আরও গভীর কারণ?”

আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজব, এবং সঙ্গে থাকছে অভিজ্ঞ শিক্ষিকা বনশ্রী রায় মিত্র– এর অন্তর থেকে আসা কিছু কথন, যিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্র পড়িয়ে আসছেন, বই পড়ার নেশা ছড়িয়ে দিয়েছেন শত শত ছাত্রছাত্রীর মধ্যে।
প্রযুক্তির উত্থান: আশীর্বাদ না অভিশাপ?
প্রযুক্তি আমাদের জীবনে বিপ্লব এনেছে, সন্দেহ নেই। তবে এই প্রযুক্তির স্রোত যেন অনেক তরুণকে বইয়ের ছায়া থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আজকের কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের খুঁজে পায় ভার্চুয়াল জগতে, কিন্তু হারিয়ে ফেলে ধৈর্য, মনোসংযোগ এবং কল্পনা। বই পড়া মানেই আজ যেন বিরক্তির কারণ—যেখানে এক ক্লিকেই পাওয়া যায় দশ রকম বিনোদন।
পাঠাভ্যাসের অবনতি: শুধু তরুণদের দায়?

এই প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ শিক্ষিকা বনশ্রী রায় মিত্র বলেন,
"কেবল তরুণদেরই বা দোষ দিই কেন? আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই স্মার্টফোনে মগ্ন। চটকদার রিলসের জ্বরে ভোগা সমাজে বই যেন লুপ্তপ্রায় প্রজাতি। তবে আমি বিশ্বাস করি, এখনও সময় আছে এই প্রজাতিকে বাঁচানোর। কিন্তু আগে আমাদের বড়দের নিজেদের আয়নায় দেখা দরকার—আমরা কি বই তুলে নিই ওদের হাতে?"
তাঁর কথায় স্পষ্ট, পাঠাভ্যাস শুধু শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নয়, শিক্ষাদাতা ও অভিভাবকদেরও দায় আছে এই বিষয়ে।
গৃহশিক্ষিকা ‘বনশ্রী রায় মিত্রের’ অভিজ্ঞতা: শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে নয়, জীবন থেকে উপলব্ধি করতে হয়…
২০০২ সালে মাত্র উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে যখন কলেজে ভর্তি হলেন, তখনই তার শিক্ষিকার প্রস্তাবে পড়াতে শুরু করলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন!
"একেবারে অভিজ্ঞতাহীন এক ছাত্রী, হঠাৎই পড়াতে বসে গেলাম—তিনজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। পিলে চমকে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা, কিন্তু শিক্ষিকার বিশ্বাসেই সাহস পেলাম। প্রথম ব্যাচ ভালো ফল করল—সেই শুরু, তারপর আর থামা হয়নি।"
শুধু পড়ানোই নয়, বনশ্রী মিত্র পড়ানোর পেছনে একটি গভীর চিন্তা রাখেন:
“যে বিষয়ে আমি ছাত্রজীবনে অস্পষ্ট ছিলাম, তা আমি চাই না আমার ছাত্রদের মধ্যে থেকে যাক। তাই আমি শেখাতে শেখাই না, শেখার মাঝেই আমি নিজে শিখি।“
খেলার ছলে শেখানো: একটি আলাদা পাঠশালা
শুধু ইংরেজি সাহিত্যের গল্প নয়, ব্যাকরণ শেখানোর পদ্ধতিতেও আছে শিল্প।

“আমি ‘We’ আর ‘They’-এর তফাত শেখাতে পাসপোর্ট সাইজ ছবি দিয়ে শামুক বানিয়ে ক্লাসে খেলতে দিই। ছোটদের গল্প শোনাতে শোনাতে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।”
তিনি তৈরি করেছেন “খুদেদের লাইব্রেরি”, যার বইগুলো ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই পড়ে, শোনে, এবং মতামতও দেয়।
তরুণদের ভবিষ্যৎ: স্রোতে ভেসে না, ভাটায় দাঁড়িয়ে
তরুণদের আচরণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন:
"তরুণরা বরাবরই স্রোতের মধ্যেই থাকে, এটাই তাদের ধর্ম। তবে সব তরুণ কিন্তু স্রোতে ভেসে যায় না—অনেকেই ফোকাসড, দায়িত্ববান। আবার কিছুজন হারিয়ে যায় মোহে, বা শর্টকাট সাফল্যের লোভে। প্রযুক্তি কারও জন্য পথ আলোকিত করে, কারও জন্য অন্ধকার ডেকে আনে।"
তবে তিনি আশাবাদী—
“আমরা যদি সহমর্মিতা, বোঝাপড়া আর চিন্তার স্বাধীনতা দিই, তাহলে ওরাই নিজেদের বিবেক দিয়ে সঠিক পথ খুঁজে নেবে। শুধু পড়ানো নয়, পড়ার প্রেম তৈরি করাই আসল শিক্ষা।”
স্রোতের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণদের জন্য আমাদের দায়
আজকের তরুণ সমাজ স্মার্টফোনে যতটা সময় কাটায়, তার সিকিভাগও যদি বইয়ের সাথে কাটাত, তাহলে চিন্তা-শক্তি আরও প্রখর হত। বনশ্রী রায় মিত্রের মত শিক্ষক -শিক্ষিকারা প্রমাণ করছেন,
সৃজনশীল পাঠদান, সহানুভূতিশীল মনোভাব এবং বাস্তব জীবনের গল্প দিয়ে বইয়ের প্রেম ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সমাজকে চাই একটুআরও সচেতন হতে, বইয়ের জন্য সময় বের করতে। আর তরুণদের বলতে হবে—
“তুমি যদি নিজের চিন্তার ভার নিজে নিতে চাও, তবে বইয়ের কাছে ফিরে এসো। স্মার্টফোনে যা দেখছ, তা মুহূর্তের, কিন্তু বইয়ে যা পাবে তা চিরন্তন।”
তথ্যসূত্র
১. ছোটদের রাবণ: সুশোভন অধিকারী
২. হাঁসজারু ও অন্যান্য ছড়া: সুকুমার রায়
৩. ভূতের রাজা দিল দরবার: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪. টুনটুনির বই: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
৫. গল্প বলার গল্প: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৬. The Gruffalo: Julia Donaldson
৭. Charlotte’s Web: E. B. White
৮. Magic Tree House Series: Mary Pope Osborne
৯. সাহসী ছেলে ও অন্যান্য গল্প: লীলাবতী মুখোপাধ্যায়
১০. আমার প্রথম ভূতের বই: সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১১. জাদুকরের ঝুলি:শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
Really important
Congratulations didi 🎉🎉🎉🥳🥳
Atto innovative vabe vebe idea gulo kaje lagana ta kintu akta art e bote…
R tumi hole artist sekhane 🙏💗