“পড়াশোনা করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে…” ছোট থেকেই আমরা বেদ বাক্যের মতোই কথাটা শুনে আসছি। পড়াশোনা করলেই বুঝি গাড়ি কথা চড়া যাবে? না না এমনটা ঠিক নয়। কথায় আছে, ‘একজন ব্যক্তি শিক্ষিত হলে, সমাজ শিক্ষিত হবে’।

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড, আর সেই শিক্ষার সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থান করা প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম নাম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রথম সারিতে স্থান পাওয়া এই প্রতিষ্ঠান কেবল আমেরিকান স্বপ্নের প্রতীক নয়, বরং বহু ভারতীয়, বিশেষ করে বঙ্গসন্তানদের জীবন ও চিন্তার গতিপথ পাল্টে দিয়েছে।
ভারতের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে হার্ভার্ড নামটি যেন এক অতিপ্রাকৃত শ্রদ্ধার জায়গা দখল করে রেখেছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া মানেই যেন মেধা, পরিশ্রম ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এক সমন্বয়। এই গর্ব শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়—একটি জাতির সম্মানের প্রতীক।
প্রতিষ্ঠা: ১৬৩৬ সালে, ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ: ধর্মতত্ত্ববিদ জন হার্ভার্ডের নামে
বিশেষত্ব: বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্পদধারী বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য নোবেল বিজয়ী, রাষ্ট্রপ্রধান, বিজ্ঞানী, ও সাহিত্যিকের জন্মস্থান
র্যাঙ্কিং: টাইমস হায়ার এডুকেশন ও QS World Ranking-এ বরাবর শীর্ষে
হার্ভার্ড একটি গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে ১০০টিরও বেশি একাডেমিক বিভাগ ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক পরিবেশ তৈরি করে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা শুধু বিদ্যাচর্চা করেন না, বরং বিশ্ব-পরিস্থিতিকে গভীরভাবে অনুধাবন করার সুযোগ পান।

১. অমর্ত্য সেন (Amartya Sen):
- অর্জন: ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার
- পদ: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের থমাস ডব্লিউ ল্যামন্ট বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক (Thomas W. Lamont University Professor)
- অবদান: কল্যাণ অর্থনীতি, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, সামাজিক পছন্দ তত্ত্ব
- বই:
তিনি ভারতের “প্রথম প্রজন্মের” হার্ভার্ড নীতিনির্ধারক শিক্ষাবিদদের একজন যাঁর চিন্তা পশ্চিম ও পূর্বের মধ্যে একটি দার্শনিক সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেছে।

২. কৌশিক বসু (Kaushik Basu):
- পদ: প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, ভারত সরকার; বর্তমানে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক
- হার্ভার্ড সংশ্লিষ্টতা: Visiting fellow ও বক্তা
- বই:
তিনি ভারতীয় অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক চিন্তার ধারায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

৩. পার্থ দাশগুপ্ত (Sir Partha Dasgupta):
- বিশেষত্ব: পরিবেশ ও নৈতিক অর্থনীতির পথিকৃৎ
- হার্ভার্ড ভূমিকা: নিয়মিত বক্তৃতা ও সহযোগী গবেষণা
- অবদান: ২০২১ সালের The Economics of Biodiversity: The Dasgupta Review
- স্বীকৃতি: নাইটহুডসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মাননা
৪. অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhijit Banerjee):

- নোবেল পুরস্কার: ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে
- সহ-প্রতিষ্ঠাতা: J-PAL (Poverty Action Lab)
- যদিও তিনি MIT-তে অধ্যাপক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়শই গবেষণা ও সেমিনারে অংশ নেন।
- বই:
ভারতীয় সমাজে শিক্ষা কেবল জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম নয়, এটি সম্মান, শ্রেণি ও সামাজিক অবস্থানের প্রতীক। এই দৃষ্টিকোণ থেকে হার্ভার্ডে পড়া মানে:
১. মেধার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:
যেহেতু হার্ভার্ডে ভর্তির হার ৪% এর নিচে, সেখানে সুযোগ পাওয়া মানে একজন ভারতীয় শিক্ষার্থীর পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা ও সক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রমাণ।
২. বৈশ্বিক নেতৃত্বে অংশগ্রহণ:
হার্ভার্ড থেকে পড়াশোনা করে অনেকে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছেছেন—জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বা আন্তর্জাতিক NGO গুলোতে।
৩. ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার:
হার্ভার্ড ইন্ডিয়া কনফারেন্স, বাংলা সাহিত্য সভা, রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান ইত্যাদি আয়োজন করে প্রবাসে ভারতীয় ও বাংলা সংস্কৃতির গৌরব রক্ষা করা হয়।
Times of India:
Bengali students at Harvard celebrate Tagore
তারিখ: ১৪ আগস্ট ২০২১
মন্তব্য: “This is not just about nostalgia, this is cultural diplomacy.”
Anandabazar Patrika:
হার্ভার্ডে কলকাতার যুবকের বক্তৃতা
তারিখ: ২৬ মার্চ ২০১৯
উল্লেখ: কলকাতা আইআইটি থেকে উচ্চশিক্ষার পথে হার্ভার্ডে পৌঁছানো এক ছেলের গল্প।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বহু ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালিদের কাছে জ্ঞান, আত্মপরিচয় এবং বিশ্বমঞ্চে অবস্থানের প্রতীক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গসন্তানদের অগ্রগামীতা প্রমাণ করে দিয়েছে—অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবেশবিদ্যা, সাহিত্য, এমনকি সংস্কৃতি—সব জায়গায় তারা অমলিন পদচিহ্ন রেখে চলেছেন। Raise Your Concern About this Content
ভারতীয়দের কাছে হার্ভার্ডে পড়া মানে এক নতুন বিশ্বচিন্তার দ্বার উন্মোচন করা, যেখানে ভারতীয় মূল্যবোধ আর পশ্চিমের মুক্তচিন্তা একত্রিত হয়। এই সংমিশ্রণই আগামী প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে উঠছে।